বাল্যবিয়ের হাত থেকে রক্ষা পেল ১৪ বছরের কিশোরী রাজিয়া (ছদ্ম নাম)। সে স্থানীয় একটি মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। নিন্ম মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা কিশোরী রাজিয়া’র (ছদ্ম নাম) বাবা করিম (ছদ্ম নাম) পেশায় একজন কৃষক। দুই ভাই- বোনের মধ্যে রাজিয়া বড়। ছোট ভাই এখনো বিদ্যালয়ের যায়নি। বাবা করিমের সাথে মা জেসমিন বেগমের মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য প্রায় ঝগড়া লেগে থাকতো। এনিয়ে প্রায় মন খারাপ থাকতো রাজিয়া। বাবার অবর্তমানে হঠাৎ একদিন প্রাইভেট পড়ে বাসায় ফিরে শুনে তাকে দেখতে আসছে ছেলে পক্ষ। দুইদিন পরে গায়ে হলুদ ও বিয়ে। এরপর তার মা তার বাইরে যাওয়া এমনকি স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিতে চান। তার সহপাঠি শারমিন বিয়ের খরব জানতে পেরে রেডিও মেঘনার শ্রোতা ক্লাব ‘শিউলি’র সদস্যদের জানায়। পরবর্তীতে রেডিও মেঘনার কর্মীরা খবর পেয়ে রাজিয়ার মায়ের সাথে কথা বলার পর বিয়ের আয়োজন বন্ধ হয়।
এর আগে শ্রোতাক্লাবের দলনেতা তানিয়া কিশোরী রাজিয়ার বিয়ের খবর শোনার পর তাকে বাল্যবিয়ের কুফল নিয়ে বিস্তারিত বুঝায় এবং ১০৯ এই হটলাইন নাম্বারে যোগাযোগ করার জন্য পরামর্শ দেয়। কিন্তু হটলাইনে কল দেয়ার পর তারা জানান, বিয়ে অনুষ্ঠিত যেদিন হবে সেদিন তারা কেবল তা বন্ধ করার জন্য আসতে পারবেন। কিন্তু এর আগে তার পরিবারকে বোঝানোর জন্য তারা আসতে অপারগ। এদিকে যতই দিন যাচ্ছিল রাজিয়ার বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসছিল।
শ্রোতাক্লাবের সদস্যদের মাধ্যমে রেডিও মেঘনা টিম জানার পর সরাসরি রাজিয়ার বাসায় গিয়ে হাজির হয়।
পরবর্তীতে রেডিও মেঘনা’র সহকারি স্টেশন ম্যানেজার উম্মে নিশি ও মৌসুমী রানী দাস ঐ বাড়িতে গিয়ে কিশোরীর মা জেসমিন বেগম ও তার দাদিকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। তারা বাল্যবিবাহের কারণে মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকিসহ সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে শিশু মৃত্যু, অপুষ্ট- বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হওয়া ইত্যাদি বিষয়ে জানান। এসময় কিশোরীর মা এই বলে বুঝানোর চেষ্টা করেন যে, মেয়ের নিরাপত্তা, পড়াশোনার খরচ চালানো ভার, সংসারে টানাটানি ইত্যাদি কারণে বিয়ে দিতে যাচ্ছেন। এবার রেডিও মেঘনার টিম কিশোরীর দাদীকে আলাদা করে ডেকে নিয়ে বাল্যবিয়ের কুফল ও বিয়ে দিলে শাস্তি কী কী তা বুঝিয়ে বলে সেই স্থান ত্যাগ করে।
এই ঘটনার কয়েকদিন পর রাজিয়া ক্লাবে এসে জানতে চায়, ক্লাব থেকে রেডিও মেঘনা টিমকে পাঠানো হয়েছিল কিনা? উত্তরে হ্যাঁ, বলার সাথে সাথে কিশোরী জানায় এতে খুব কাজ হয়েছে। তার মা ১৮ বছর না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দিবেন না বলে স্থির করেছেন। রাজিয়া এখন নিয়মিত স্কুলে ও প্রাইভেটে পড়তে যায়। একই সাথে অবসর সময়ে যুক্ত হয় রেডিও মেঘনার শ্রোতা ক্লাব শিউলি ক্লাবে। সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাজিয়া বলেন, বিয়েটা বন্ধ হওয়াতে ভবিষ্যৎ থেকে রক্ষা পেয়েছে। পড়াশোনা শেষ করে চাকুরি করতে চান তিনি। সেই স্বপ্ন পূরণে প্রথম বাধাটি অতিক্রম করতে সহযোগিতা করেছেন শ্রোতা ক্লাবের সদস্য এবং রেডিও মেঘনা টিম।