১১ডিসেম্বর ২০২৫, চরফ্যাশন, ভোলা: জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকাগুলোয় ঘূর্নিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, আকস্মিক দমকা হাওয়া ও সাগরের ঢেউ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে অধিক ঝুঁকিতে সমুদ্রগামী জেলেরা, তাদের জীবন ও জীবিকা দুটিই অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। তীরবর্তী এলাকায় মাছ কমে যাওয়ায় তারা এখান আরো গভীর সমুদ্রের দিকে যেতে বাধ্য হচ্ছে, ট্রলারগুলোতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জাম না থাকায় নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ছে। তাদের সুরক্ষায় আবহাওয়া সতর্কীকরণ জোরদার করা, নিরাপদ নৌযান ও প্রতিটি নৌযান বাধ্যতামূলক ভাবে নিরাপত্তা সরঞ্জাম লাইফ জ্যাকেট, লাইফ বয়া, ফাস্ট এইড বক্স, ভিএইচএফ, জিপিএস ইত্যাদি নিশ্চিত করা, সমুদ্র নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ প্রদান করা, আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করা, বীমা ব্যবস্থা চালু, বিকল্প জীবিকা তৈরি এবং কার্যকর সরকারি নীতি গ্রহণ করা জরুরি।
আজ ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কোস্ট ফাউন্ডেশনের আয়োজিত “ বৈধ জালের ব্যবহারে হুমকিতে জীববৈচিত্র্য; আইন প্রয়োগের পাশাপাশি প্রয়োজন বিকল্প আয়ের সুযোগ” শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এক সকল দাবী উত্থাপন করে। কোস্ট ফাউন্ডেশনের হেড ক্লাইমেট চেইঞ্জ, এম.এ হাসানের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোঃ লোকমান হোসেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, চরফ্যাশন, ভোলা এবং সভাপত্বি করেন মোঃ নাজমুল হুদা, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, চরফ্যাশন, ভোলা, এছাড়াও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, সহকারি পরিচালক-সিপিপি, রাশিদা বেগম-সহাকারি পরিচালক, কোস্ট ফাউন্ডেশন, জেলে প্রতিনিধি, মহাজন, আড়তদার, সাংবাদিক, শিক্ষক, নারী নেত্রীসহ অনেকে অংশগ্রহণ করে। সেমিনার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন এবং সঞ্চালনা করেন এম.এ হাসান, হেড ক্লাইমেট চেইঞ্জ, কোস্ট ফাউন্ডেশন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় এম.এ হাসান, হেড ক্লাইমেট চেইঞ্জ, কোস্ট ফাউন্ডেশন বলেন সমুদ্রগামী জেলেদের জীবন সুরক্ষায় গুরুত্ব দিতে হবে। সমুদ্রগামী সকল ট্রলারে জিপিএস থাকার কথা থাকলে বাস্তবে তা রয়েছে মাত্র ৬% ট্রলারে, এবং বড় ও মাঝারি ট্রলার সরকারি ভাবে নিবন্ধিত থাকার কথা থাকলে ও ৯০% ট্রলারেই সরকারি নিবন্ধন নেই। বড় ট্রলার গুলোতে ২০-২৫জনের বিপরীতে ৪-৫টি লাইফ জ্যাকেট, বয়া থাকে ২-৩টি কিন্তু অধিকাংশ মাঝারি ট্রলারে তাও থাকে না আর ছোট ট্রলার/নৌযানগুলোতে কোনো ধরণের নিরাপত্তা উপকরণই নেই। তাই সকল মাছ ধরার নৌযানে প্রয়োজনীয় জীবন সুরক্ষা-সামগ্রী নিশ্চিতে আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও উপকরণ সরবরাহ করতে হবে এবং প্রয়োজনে স্থানীয় পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোঃ লোকমান হোসেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, চরফ্যাশন, ভোলা বলেন আমাদের নদী-সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় জেলে ও মহাজনদের অবৈধ জালের ব্যবহার বন্ধে এবং ট্রলিং এর মাধ্যমে মাছ শিকার বিষয় মৎস্য দপ্তরকে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হবে।
সহকারি অধ্যাপক, নজরুল ইসলাম বলেন জেলেদের জীবনমান উন্নয়ন এবং জীবন সুরক্ষা কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। মহাজন, ট্রলার মালিকদের অবশ্যই ট্রলার সামগ্রি[ লাইফ জ্যাকেট, বয়া, জিপিএস ইত্যাদি নিশ্চিতে বাধ্য করতে হবে এবং জেলে পরিবারের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আইজিএ কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে হবে।
জেলে প্রতিনিধি মোঃ জয়নাল বলেন, অধিকাংশ জেলে পরিবার অবরোধকালিন সময় প্রয়োজনীয় সরকারি সহায়তা পায় না, তাই জেলেদের মধ্যে অবৈধ জালের ব্যবহার বন্ধে উৎসাহিত করতে এবং তা স্বচ্ছ ভাবে বিতরণ নিশ্চিতে জেলেদের জন্য ১০ টাকায় ব্যাংক একাউন্ট খুলে তাতে অবরোধের বর্তমান বাজার ব্যবস্থাপনা বিবেচনায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে মাসিক ভাতা হিসেবে নুন্যতম প্রতি জেলে পরিবারের জন্য ৮০০০ টাকা বরাদ্দ দেয়া জরুরি।
জিএম, ওয়ালিউল ইসলাম, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে দিন দিন জেলেদের মাছ শিকারে ঝুঁকি বাড়ছে, তাই জেলেদের জীবনমান উন্নয়নে সমন্বিত উদ্যোগের বিকল্প নেই।
সভাপতির বক্তব্যে মোঃ নাজমুল হুদা, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, চরফ্যাশন, ভোলা বলেন, আমাদের দেশের জেলে পরিবারগুলো এখনও নিজেদের পরিবারের খাদ্য চাহিদা পূরণে লড়াই করছে, তারা অবরোধকালিন সময় চরম অর্থ সংকটে পড়ে, ঋণগ্রস্থ হচ্ছে, তাই জেলে সম্প্রদায়ের জীবন, জীবিকা এবং মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে।