আজ ভোলায় কোস্ট ফাউন্ডেশনের অধীনে আন্তর্জাতিক নারী জেলে দিবস ২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপকূলীয় নারীরা শুধু ঘর সামলান না, তারা মাছ ধরা, পরিবেশ রক্ষা, ও স্থানীয় নেতৃত্বের জন্য অনুপ্রেরণা
ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের নাছির মাঝির ঘাট সংলগ্ন নদীর পাড়ে, আজ ৫ নভেম্বর ২০২৫, কোস্ট ফাউন্ডেশনের আয়োজনে আন্তর্জাতিক নারী মৎস্য দিবস উদযাপন করা হয়। সকাল সাড়ে ১০ টায় শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে ভোলা সদর নারী নেটওয়ার্কিং কমিটির নেতৃবৃন্দ লিপি ও শারমিন বেগম এই আয়োজনের নেতৃত্ব দেন। এই সমাবেশে প্রায় ৪০ জন নারী ও পুরুষ অংশ নেন, যাদের মধ্যে ছিলেন ক্ষুদ্র জেলে পরিবারের নারী সদস্যরা, স্থানীয় মৎস্যনেতা ও কোস্ট ফাউন্ডেশনের কর্মী।
কোস্ট ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক রাশিদা বেগম বলেন, “নদী, উপকূল ও মোহনায় লক্ষ লক্ষ নারী প্রতিদিন কাজ করেন। জাল বাঁধা, সেলাই, মাছ শুকানো, ধোয়া-প্রসেসিং এবং বাজারজাতকরণে তাদের অবদান অপরিসীম। কিন্তু তাদের কাজ প্রায়শই উপেক্ষিত এবং দৃশ্যমান নয়, আমরা আজ তাদের সেই শ্রমকে সম্মান জানাতে ও আইনি স্বীকৃতির দাবি জানাতে এক হয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ডমৎস্য ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে কাজ করে এমন সক্রিয় সংস্থা, নেটওয়ার্ক ইত্যাদিতে নারী জেলেদের অভিজ্ঞতা, দাবি এবং কৌশল আদান-প্রদান করার সুযোগ আরও বেশি করে তৈরি করতে হবে। যা আমাদের এই সমন্বিত আন্দোলনকে আরও বেগবান করবে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO)-এর তথ্যানুসারে, বিশ্বব্যাপী মৎস্য ও অ্যাকুয়াকালচারে নারীর অংশগ্রহণ প্রায় ২৮%, তবে ক্ষুদ্র-স্কেল ফিশারিতে এই হার ৫০% এরও বেশি। তবুও অধিকাংশ নারী এখনও সরকারিভাবে স্বীকৃতি ও ন্যায্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত।
আলোচনায় এই সেক্টরের প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরা হয়- শিল্পায়িত বা ব্যক্তি মালিকানাধীন অ্যাকুয়াকালচার, গভীর সমুদ্র খনন, উপকূলীয় জমি, জলবায়ু পরিবর্তন, ও জলাভূমি দখলের ফলে নারী জেলেদের উপার্জন ও কর্মক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্থ এবং সংকুচিত হচ্ছে। বিশেষ করে জলবায়ু ঝুঁকি ও বন্যা-জলোচ্ছ্বাসে নারী পরিবারের জীবন ও আয় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্থানীয় মৎস্যনেতা আব্দুল হাই বলেন, “উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা দরকার; তিনি বলেন, নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীকে অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।”
স্থানীয় নারী নেত্রী লিপি এবং শারমিন বেগম আরও বলেন, নারীদের প্রধান দাবি হলো- সরকারি ও সমবায় প্রতিষ্ঠানে সমান নেতৃত্ব, জেলেদের জন্য আইনগত স্বীকৃতি, নিরাপদ উপকূল ব্যবহার, জলবায়ু ক্ষতিপূরণে নারীর অংশগ্রহণ, স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা, সামাজিক সুরক্ষা, ন্যায্য বাজার ব্যবস্থাপনা ও সহজ স্বর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা। এছাড়া আলোচনার সময় নারী নেতৃবৃন্দ অ্যাকুয়াকালচার ও সমুদ্র খনন থেকে স্থানীয় ইকোসিস্টেম রক্ষা করার জোর দাবি তোলেন। এই পর্যায়ে সকলে একমত হন, এই দিবসটি শুধু স্মরণে রাখা বা উদযাপন করার জন্য নয়, আমাদের উচিত এই দাবিসমূহ নীতি প্রণয়নকারীদের নিকটে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা।
সমাপনী বক্তব্যে কোস্ট ফাউন্ডেশনের অন্য প্রতিনিধিরা বলেন, আমরা সরকারি প্রতিষ্ঠান, সিভিল সোসাইটি ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে একযোগে কাজ করে যাব। নারী জেলেদের অধিকার, জীবিকা ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমরা দীর্ঘমেয়াদে নীতি পর্যায়ে প্রভাব সৃষ্টি করতে চাই।