চরমাদ্রাজ ৮নং ওয়ার্ডের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তি কমলা বেগম (৩৫)। জন্মের পর থেকে অন্যান্য শিশুদের মতো তিনিও সুস্থ্য-সবল ছিলেন। তার বয়স যখন ১১ বছর হয় তখন হঠাৎ টাইফয়েড জ¦রে আক্রান্ত হন তিনি। এই জ¦র সেরে উঠার পর দুই হাত ও দুই পা বাঁকা হয়ে যায়। বাবার সংসারে অভাব থাকায় ভালো চিকিৎসা করাতে পারেননি বলে জানান তিনি।
কমলা বেগম জানান, ছোটোবেলা থেকেই স্কুলের সহপাঠি ও প্রতিবেশীর কাছে অপমান/অবহেলা পাওয়ায় সবসময় বদ্ধ ঘরের কোনায় একা একা থাকতেন। যার কারণে পড়াশুনা করা হয়নি কমলা বেগমের।
তিনি আরো বলেন, অনেক টাকা খরচ করে বিয়ে দেয় তাকে। বিয়ের কয়েক বছরের মধ্যে কোলে আসে এক ছেলে ও এক মেয়ে। তিনি ভেবেছিলেন, সামনের দিনগুলো ভালো কাঁটবে তার। আরো ভেবেছিলেন এই বুঝি একটু সুখে থাকতে পারবেন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে। কমলা বেগম আরো বলেন, একবারও ভাবিনি যে, বেঁচে থাকার বোঝাটা আমার জন্য আরও ভারি হতে চলেছে। বড় মেয়ের বয়স যখন ১০ ও ছোট ছেলের বয়স ৬ বছর হয় তখন ওর বাবা আমাদের ছেড়ে চলে যায়। কোনোভাবে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে সংসারের বোঝা হালকা করতে চেয়েছি। কিন্তু মেয়ের জামাইকে যৌতুক দিতে না পারায় মেয়ের জামাইও মেয়েকে ছেড়ে চলে যায়। পাড়া-প্রতিবেশীর বিভিন্ন অবহেলা ও অপমানের সমাজে এখন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে অভাবের সংসারে কোনোমতে দিন কাটাই।
এদিকে চরফ্যাসন উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ মামুন হোসেন বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি আমাদের সমাজের দৃষ্টি বদলাতে হবে। তাদেরকে পিছিয়ে রেখে আমরা কখনো সমাজের উন্নতি করতে পারবো না। তাই সমাজের সকলকে নিয়ে একসাথে এগিয়ে যেতে হবে। এজন্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দক্ষ করে তুলতে আমরা বিভিন্ন প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা রয়েছে যেমন: ট্রেইলারিং, পশু-পাখি পালন, বিভিন্ন ধরনের ডিবাইসের ব্যবহার, ডিবাইস সার্ভিসিং প্রশিক্ষন, ই-লার্নিং ব্যবসা ইত্যাদি। এই প্রশিক্ষণ পেতে বিশেষ চাহিদা সম্পূর্ণ শিশুদের প্রতি লক্ষ্য রাখুন যে, সে কোন ধরনের কাজগুলো করতে পারে বা পছন্দ করে সে অনুযায়ী আমরা তাদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করি।
তিনি আরও জানান, আমাদের কাছে বিভিন্ন প্রশিক্ষন নিতে আসা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বেশিরভাগই দেখা যায় তারা বিভিন্ন কাজ করার মাধ্যমে অন্যদের তুলনায় বেশি অবদান রাখে পরিবারে। তাই তাদের প্রতি অবহেলা না করে তাদেরকে সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার সুযোগ করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে তারা সমাজে অবহেলিতভাবে না থেকে সমাজের ও পরিবারের জন্য অর্থ উপার্জনকারী কাজে অংশগ্রহন করার পাশাপশি সমাজের উন্নয়নমূলক কাজেও অংশগ্রহণ করতে পারবে।