বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘নারী’ কবিতায় লিখেছেন, বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। প্রতিটি নারীর সফলতার পিছনে থাকেন তিনি নিজেই। তার ইচ্ছাশক্তি এবং মনোবল তাকে নিয়ে যেতে পারে বহুদূর। তেমনি করেই একজন সফল মানুষ হিসেবে নিজের পরিচয় গড়ে তুলেছেন চরফ্যাশনের ৩৫ বছর বয়সি কুলছুম আক্তার পলি।
২০০৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক এ পড়াশোনা করা অবস্থায় বেকার ছেলেকে বিয়ে করায় নিজের পরিবার ও স্বামীর পরিবারে আশ্রয় হয়নি তাদের। শশুরবাড়ীর অত্যাচার ও নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে স্বামীসহ বেড়িয়ে আসেন তিনি।
অসচ্ছল সংসারে হাল ছাড়েননি পলি। ছোটবেলা থেকেই তিনি চাইতেন স্বাবলম্বী হতে, স্বাধীনভাবে বাঁচতে, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে। কিন্তু প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় আর্থিক অবস্থা। এদিকে অভাবও এসে দাঁড়িয়েছে ঘরের দুয়ারে। এমন পরিস্থিতিতে পলি সংসারের হাল ধরার সিদ্ধান্ত নেয়। শুরু করেন টিউশন। সামান্য এই আয় দিয়ে অনার্সে ও প্যাথলজি পড়াশোনা শুরু করেন। একই সাথে স্বামীর খরচও চালাতেন তিনি।
এরপর ১২০০ টাকার বেতনে চরফ্যাশনের একটি ডায়গোনিস্ট প্যাথলজি বিভাগে নতুন কর্মজীবন শুরু করেন পলি। এই যাত্রায় উৎসাহ, অনুপ্রেরণা যুগিয়ে তাঁর পাশে থেকেছেন স্বামী আব্দুর কাদের। ধীরে ধীরে প্যাথলজিস্ট অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে শুরু করেন ডায়গোনিস্ট সেন্টারে শেয়ারে ব্যবসা।
তিনি নানা প্রতিকূলতাকে জয় করে, কর্মক্ষেত্রে পরিশ্রম, নিষ্ঠা, সততা ও মেধার পরিচয় দিয়ে আজ পলি একজন সফল উদ্যোক্তা। অদম্য নারী হিসেবে নিজেকে দাঁড় করিয়েছে এই সমাজে। বর্তমানে মেঘনা ল্যাব ডায়াগনস্টি ও ইকরা হাসপাতাল এন্ড ডাযাগনস্টিক সেন্টারের মালিক কৃলছুম আক্তার পলি।
এছাড়াও ৪ সন্তানের জননী তিনি। সাংসারিক কাজ, স্বামী ও ছেলে সন্তানের দেখাশোনার পাশাপাশি তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন নিজের একার হাতে। তবে এখানেই তিনি সীমাবন্ধ নয় তিনি, তার বাড়ির ছাদে গড়ে তুলেছেন একটি পারিবারিক পুষ্টি বাগান। যার পরিচর্যাও তিনি নিজেই করেন।
বন্ধুরা, সাফল্য একদিনে আসে না। সাফল্যর জন্য প্রয়োজন সময়, মেধা আর ধর্য্য।