মাদ্রাজ ইউনিয়নের বাতানখালি গ্রামের এক কোণে, ছোট্ট একটি ঘরে বসবাস করেন আনিসুল হক। বয়স তার ৭২ ছুঁই ছুঁই। শরীর ভেঙে পড়েছে বয়সের ভারে, চোখের দৃষ্টিও ঝাপসা, কিন্তু দু’হাত এখনো থেমে নেই।
এই দুই হাতেই তৈরি হয় নিপুণ ভাবে, মনের মায়া দিয়ে বাঁশের মোড়া। প্রায় ৫২ বছর ধরে এভাবেই বানিয়ে আসছেন বাঁশের মোড়া। মোড়ার গায়ে জমা আছে কেবল বাঁশ নয়, জমে আছে সময়, সংগ্রাম আর নিঃশব্দ কষ্ট।
ছোটবেলায় প্রতিবেশির কাছ থেকে এই কাজ শিখেছিলেন। তারপর সংসার বড় হলো, সন্তান হলো, কিন্তু জীবিকা বদলায়নি। আজও প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আনিসুল হক বাঁশ কাটেন, চাকু দিয়ে তৈরী করেন কাঠামো, তারপর গড়ে তোলেন মোড়া।
তিনি বলেন, এই কাম কইরা চালাই নিজের খরচ। আর কেউ দেখবার নাই। পাঁচ মেয়ে‘র মাঝে আছেন একমাত্র ছেলে, কিন্তু খোঁজ নেন না কখনো।
আগের মতো বাঁশঝাড় নেই এখন একটি বাঁশ কিনতে খরচ হয় ২০০ থেকে ৪০০ টাকা। এই খরচে বানাতে পারেন ছোট মোড়া ছয় থেকে সাতটি। সপ্তাহে এক হাজার টাকার বেচা -কেনা করতে পারেন তিনি।
একাকী এই বৃদ্ধ মানুষটির দিনের শেষে সঙ্গী তার সহধর্মিনী। কাজে সাহায্য করেন তাকে।
পাড়া-প্রতিবেশীরা বলেন, কারো উপর ভরসা করেনা আনিসুল হক নিজের পরিশ্রমে চলেন।
বাজারে এখন তেমন চাহিদা নেই, বিক্রিও কম। তবু যা পান, তা দিয়েই চালিয়ে নিচ্ছেন জীবন। আনিসুল হকের চোখে নেই কোনো স্বপ্ন, আছে শুধু হাল না ছাড়া এক নিঃশব্দ আত্মসম্মান।