চরফ্যাসন উপজেলায় এক সময়ে শীত মৌসুম শুরুতেই গ্রামগঞ্জের মানুষরা খেজুর গাছ কাটা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করতেন। চোখে পড়তো রসের হাঁড়ি ও খেজুর গাছ কাটার সরঞ্জামসহ গাছিদের ব্যস্ততার দৃশ্য। মৌসুম শুরুতে সাত সকালে খেজুরের রস নিয়ে গাছিরা বাড়ি বাড়ি হাকডাক দিতেন এবং চলতো খেজুরের রস কিংবা রসের পাটালি গুড় দিয়ে মজাদার পিঠাপুলির আয়োজন। তবে এখন আর এ দৃশ্য তেমন চোখে পড়ে না।
উপজেলার জাহানপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের আলাউদ্দিন ও সালাউদ্দিন বলেন, খেজুরের গাছ কমে যাওয়ায় তাদের চাহিদাও কমে গেছে। কয়েক বছর আগেও এই কাজ করে ভালোভাবেই সংসার চালাতেন। যে কয়েকটা খেজুর গাছ আছে তা বয়স হয়ে যাওয়ায় তেমন রস পাওয়া যায় না। রস বাজারে বিক্রির মতো আগের সেই অবস্থা নেই। এইতো কয়েক বছর আগে এক হাড়ি খেজুর রস বিক্রি করতাম ২০/৩০ টাকা। এখন খেজুর গাছ না থাকায় সে রসের দাম বেড়ে হয়েছে ২০০ টাকা।
গ্রামের লিমা বেগম জানান, গ্রামে এখন খেজুর গাছ নেই বলেই চলে। তাই মন চাইলেও খেজুরের রস পাওয়া যায় না। পিঠা বা নাস্তার জন্য কিনে আনা খেজুর রসের সেই স্বাদ পাওয়া যায় না। এখন গাছ যেমন কমে গেছে তেমনি কমে গেছে গাছির সংখ্যাও। ফলে প্রকৃতিগত সুস্বাদু সে রস এখন আর তেমন নেই।
বিবি খাতুন জানান, কত খেয়েছি কাঁচা রসের পায়েস। সেই কাঁচা রসের পায়েস খাওয়ার কথা এখনো ভুলতে পারি না। আমাদের নাতি-নাতনীরা তো আর সেই দুধচিতই, পুলি-পায়েস খেতে পায় না। তবুও ছিটেফোঁটা তাদেরও কিছু দিতে হয়। তাই যে কয়টি খেজুর গাছ আছে তা থেকেই রস,গুড়,পিঠাপুলির আয়োজন করা হয়।
উপজেলার সূত্র জানা যায়, দিনে দিনে উপজেলার গ্রামগঞ্জে খেজুর গাছ কমতে থাকলেও হারিয়ে যায়নি। এখনও রয়েছে গ্রামের দিকে কিছু গাছ। সুস্বাদ ও পিঠাপুলির জন্য অতি আবশ্যক উপকরণ হওয়ায় এখনও খেজুর রসের চাহিদা রয়েছে। তবে আগের মত খেজুরের রস ও গুড় পাওয়া যায় না। পেলেও আগের চেয়ে ১০ গুন বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এদিকে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক এই মধুবৃক্ষ (খেজুর গাছ) ঘিরে গ্রামীণ জনপদে সময় চলছে উৎসবমুখর পরিবেশের। সেই ভাবে তুলনামূলক চরফ্যাশন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে খেজুর গাছ অনেকটাই বিলুপ্তির পথে।
অধরা ইসলাম ও ফাতেমা
রেডিও মেঘনা-চরফ্যাসন।